গল্পঃজ্বীন সন্তান
পর্বঃ01
কিছুদিন ধরেই আমাদের সন্তানের আচরণ কেমন জানি ভালো লাগছে না। এত ছোট থাকতে কোন শিশুর আচরণ এমন হওয়া কোনো স্বাভাবিক শিশুর ব্যাপার না।
(হেলো, আমি মোঃ মোরসালিন। একটি অফিসে চাকরি করি। মা-বাবা,শ্বশুর-শাশুরি কেউ-ই নেই।একটি দুর্ঘটনায় মারা যায় তাঁরা। বউ,ছেলে আর আমি এই নিয়েই আমাদের পরিবার।)
আমার ছেলের বয়স মাত্র ১বছর। এর মধ্যেই ও ৪-৫বছরের ছেলে-মেয়েদের মত কথা বলে। তাও কথা বাজিয়ে-বাজিয়ে বলে না। আর নিজের খাবার নিজে নিয়েই খায়! আমাদের ফোন নিয়ে গেম ডাউনলোড করে খেলে!
এরপর কয়েক বছর পর ওকে শিশু ক্লাসে ভর্তি করালাম। কিছুমাস যেতে না যেতেই প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরিক্ষা শুরু হয়ে গেল। ওতো পড়তে চায় না। রেজাল্ট হয়ত খারাপ আসবে। পরিক্ষা শেষ হলো।রেজাল্ট দিল কয়দিন পর। আমার হাতে রেজাল্ট আসল।আমি ওর রেজাল্ট দেখে সত্যিই অবাক! সব সাবজেক্ট এ 100মার্ক পেয়েছে।এমনকি ১মার্ক ও কম পায়নি। ওর হাতের লেখাও এত সুন্দর হয়েছে যা এত ছোট থাকতে আমারও ছিল না।
শিক্ষকরা আমার ছেলেকে খুব প্রসংশা করল। সত্যিই আমি গর্বিত এমন ছেলে পেয়ে।
আজকে রাতে ওকে কষ্ট করে টেবিলে বসালাম গণিত করাতে। ওকে একটা লেখা অংক এবং যোগ বিয়োগ করে বুঝিয়ে দিলাম। এবার ওকে যোগ-বিয়োগ মিশ্রিত একটি কঠিন লেখা অংক করতে দিলাম। ওর জন্য এটা অনেক কঠিন। হয়ত পারবে না। কিন্তু ও আমাকে এবার অবাক করে দিয়ে ওই অংকটা করে দিল। আমি সত্যিই অবাক।
এত ছোট ছেলে কীভাবে এটা পারে? যা ও কখনো করেনি।
ওকে জিজ্ঞেস করলামঃআচ্ছা মুরাদ(মুরাদ আমার ছেলের নাম), তোমাকে কী এই অংকটা শিক্ষকে করিয়ে দিয়েছে? মুরাদঃনা আব্বু। আমিঃতাহলে এই অংকটা কীভাবে পাড়লে,তোমাকে তে কেউই অংকটা করে দেয় নি। মুরাদঃআমি অনেক কিছুই পারি যা তোমরা কেউই পার না(একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে)।
তারপর মুরাদ ঘুমাতে চলে গেল।স্ত্রীর আজ নাইট ডিউটি হাসপাতালে(আমার স্ত্রী একজন নার্স)। আমি ফেসবুকে স্ক্রল করতেছি এমন সময় সামনে একটি পোষ্ট দেখলাম,যেটায় লেখা ছিল একটি মানুষ জ্বীন না আসল মানুষ যেভাবে চিনবেন।
আমি পোষ্টটায় ধুকলাম।ওটায় লেখা ছিলঃ একটি জ্বীনের সবচেয়ে পছন্দ রূপ হচ্ছে সাপ ও মানুষের রূপ। এরা ছোট থেকেই অন্যের সাহায্য নিতে পছন্দ করে না। নিজের জিনিস নিজেই নেয়। এদের কোন কিছুর অভিজ্ঞতা লাগে না। এমনিতেই সব পারে, যেমনঃ পড়া-লেখা,গান,নাচ,কাজ। এরা বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। এটুকু পড়ার পরই চোখে ঘুম-ঘুম ভাব এলো। আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
এরকম ভাবেই অফিসের কাজ,ছেলেকে সামলাতে-সামলাতে কেটে গেল আরও কয়েক বছর। বর্তমানে আমার ছেলে এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়েছে। আর ৫দিন পর তাঁর রেজাল্ট দিবে। প্রত্যেক ক্লাসেই আমার ছেলে ফার্স্ট বয় ছিল,এখনও আছে। দেখতে দেখতে আরও ৫দিন কেটে গেল। আজকে মুরাদের রেজাল্ট দিবে। কিছুক্ষণ পর মুরাদ রেজাল্ট নিয়ে এলো। মুরাদ "গোল্ডেন এ প্রাস" পেয়েছে। আজকে আমি খুব খুশি। প্রত্যেক ঘরে মিষ্টি খাওয়ালাম। অফিসেও গিয়েছিলাম মিষ্টি খাওয়াতে।
অফিস থেকে ফিরছি এমন সময় মুরাদের মা'র অপারেশন করে মুরাদকে যিনি বের করেছে সেই ডাক্তারের সাথে দেখা তাকেও মিষ্টি খাওয়ালাম আর বললাম আমার ছেলের "গোল্ডেন এ প্লাস" এর কথা। কিন্তু এবার তিনি যা বললেন তা শোনার পর আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। তিনি বললেন.............. চলবে?
You must be logged in to post a comment.