সুন্দরী কমলা শুধুই কি কাল্পনিক চরিত্র নাকি বাস্তব?

adx Ar
Adx AR

সুন্দরী কমলা কি শুধুই গল্প নাকি সত্যি! 

  বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় প্রাচীন কীর্তির জন্য বিখ্যাত। আজ থেকে দু হাজার বছরেরও আগে এ অঞ্চলের নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। এখানে তখন গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের প্রাচীন নগরী। নাম ছিল তার পুণ্ড্রনগর। পুণ্ড্রনগর ছিল গৌড় রাজ্যের একটি অংশ। আমাদের এ কাহিনী অবশ্য অনেককাল পরের।

        এ কাহিনী যে সময়ের তখন পুণ্ড্রুনগরের শাসক ছিলেন জয়ন্ত নামের একজন সেনাপতি। নগরীতে তিনি এক বিশাল মন্দির নির্মাণ করেন। প্রতি সন্ধ্যায় মন্দিরে বসত ধৰ্মীয় সঙ্গীত আর নৃত্যের জলসা। নর্তকীদের মধ্যে প্রধান যিনি ছিলেন তার নাম কমলা। রূপে-গুণে তার তুলনা হয় না। একদিন তিনি দেখলেন নাচের আসরে দর্শকদের আসনে বসে আছেন এক অপরিচিত ব্যক্তি। দেখতে খুব সুন্দর–যেন রাজপুরুষ। তন্ময় হয়ে দেখছেন নাচ। নিজের অলক্ষ্যেই তার ডান হাতটি একটু পরপর উঠে আসছে কাঁধের ওপর আবার নেমে যাচ্ছে! বুদ্ধিমতী কমলা একটা কিছু আঁচ করতে পারেন। এই অপরিচিত যুবক নিশ্চয়ই কোনো বড় বংশের কেউ হবেন। রাজরাজড়াগণ যখন তন্ময় হয়ে আসরে গান শুনতেন বা নাচ দেখতেন তখন পরিচারিকারী পানের ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত পেছনে। একটু পরপর রাজা পেছনে হাত দিয়ে পান নিয়ে মুখে পুরতেন। হয়তো সেই অভ্যাসের কারণেই অপরিচিত যুবক বারবার হাত কাঁধের ওপর ওঠাচ্ছেন।—বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা যাক! কমলার নির্দেশে পরদিন সন্ধ্যায় এক পরিচারিকা আসর চলার সময় পানের ডালি নিয়ে যুবকের পেছনে দাঁড়াল। যুবক তন্ময় দৃষ্টিতে নাচ দেখছেন আর হাত উঠে যাচ্ছে কাঁধের ওপর। এবার হাত গেল পানের ডালিতে। তিনি পান তুলে নিয়ে মুখে পুরতে লাগলেন।–কমলারও পরীক্ষা করা হয়ে গেল। অনুষ্ঠান শেষে পরিচারিকা যুবককে ডেকে নিয়ে গেল কমলার ঘরে। কমলার প্রশ্নের মুখে নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন যুবক।

        এই যুবক আর কেউ নন কাশ্মিরের বিখ্যাত রাজা জয়াপীড় বিনয়াদিত্য। তিনি আট শতকের শেষ ভাগে কাশ্মিরের সিংহাসনে বসেছিলেন। নানা বিষয়ে তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। জ্ঞানী ব্যক্তিদের যথেষ্ট সমাদর করতেন। পাশাপাশি একটু খামখেয়ালি স্বভাবেরও ছিলেন এই রাজা |

        একবার তিনি দিগ্বিজয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে কাশির থেকে বের হন। প্রতিবেশী অনেক রাজ্য জয় করে এগিয়ে যান পূর্ব দিকে। এভাবে অনেকগুলো বছর কেটে গেল। জয়াপীড়ের সৈন্যদের মন ব্যাকুল হয়ে উঠল দেশে ফেরার জন্য। রাজাকে ছেড়ে কেউ কেউ শুরু করল দেশে ফেরা। রাজা খুশি মনে সকলকে বিদায় জানালেন। অবশিষ্ট অল্প কিছু সৈন্য নিয়ে তিনি আজকের এলাহাবাদে এলেন। সেকালে এলাহাবাদের নাম ছিল প্রয়াগ। প্রয়াগে ছিল হিন্দুদের তীর্থ। এখানে জয়াপীড় ব্রাহ্মণদের প্রচুর অর্থসম্পদ দান করলেন।

        খেয়ালি রাজা জয়াপীড়ের এবার শখ জাগল ছদ্মবেশে একাকী ভ্রমণে বেরুবেন। একদিন সবার অলক্ষ্যে বেরিয়ে পড়লেন। আরো পূর্বদিকে এগুতে লাগলেন তিনি। এভাবে একদিন এলেন বাংলার সীমানায়। পুণ্ড্রবর্ধনে আসার কাহিনী এভাবেই লেখা রয়েছে কাশ্মিরের প্রাচীন ইতিহাসে।

        কাশ্মির রাজা জয়াপীড়কে পছন্দ হল কমলার। কমলাকেও পছন্দ করলেন জয়াপীড়। এক শুভক্ষণে বিয়ে হয়ে গেল তাদের। কমলার ঘরেই বাস করতে লাগলেন কাশির রাজা।

        এক বিকেলে নদীতীরে গিয়েছিলেন জয়াপীড়। বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। বাড়ি এসে দেখেন কেমন থমথমে ভাব। সবার মুখে ভয়ের চিহ্ন। কমলা জানাল নদীতীরের জঙ্গলে এক হিংস বাঘ এসেছে। তার থাবায় প্রাণ দিয়েছে অনেকে। রাতে নগরবাসী ঘরের বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছে না। সব শুনে মনে মনে সঙ্কল্প করলেন জয়াপীড়। বাঘটাকে হত্যা করতেই হবে।

        পরদিন সন্ধ্যায় কেউ কিছু না বলে জয়াপীড় বাড়ি থেকে বেরুলেন। জঙ্গলের কাছাকাছি এসে অপেক্ষা করলেন বাঘ কখন বেরোয়। কিছুক্ষণ পরই বলশালী এক বাঘ বেরিয়ে এল। গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল রাজা জয়াপীড়ের ওপর। রাজা কালবিলম্ব না করে তাঁর বাম হাত ঢুকিয়ে দিলেন বাঞের মুখে আর ডান হাত দিয়ে এক ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দিলেন পেট বরাবর। আড়াআড়ি চিরে গেল বাঘের পেট। এভাবেই মারা গেল হিংস বাঘ। বাঘের দাঁতে রাজার বাম হাতের অনেকটা কেটে গিয়েছিল। হাতটি কাপড় দিয়ে বেঁধে তিনি ফিরে এলেন বাড়িতে।

        পরদিন সকালে পুণ্ডবর্ধনের শাসক জয়ন্ত বাঘ হত্যার খবর জানলেন। ছুটে গেলেন বাঘটাকে দেখতে। অবাক হয়ে দেখলেন মৃত বাঘের মুখের মধ্যে আটকে আছে একটি সোনার বালা। বালাটি হাতে নিয়ে তিনি পরীক্ষা করলেন। বিস্ময়ে দু চোখ বড় হয়ে গেল তার। বালার গায়ে খোদাই করা আছে কাশ্মির রাজা জয়াপীড়ের নাম। জয়ন্তর বুঝতে বাকি রইল না যে, রাজা জয়াপীড় পরিচয় গোপন করে পুণ্ডবর্ধনেই রয়েছেন। তার হাতেই নিহত হয়েছে বাঘটি। জয়ন্তর নির্দেশে বাড়ি বাড়ি খোঁজ করা হল। শেষ পর্যন্ত নর্তকী কমলার বাড়িতে পাওয়া গেল রাজাকে। রাজা জয়াপীড়কে সম্মানের সাথে জয়ন্তের দরবারে আনা হল। জয়ন্তের অনুরোধে জয়াপীড় তার কন্যা কল্যাণ দেবীকে বিয়ে করলেন। বলা হয়ে থাকে জয়াপীড় গৌড়রাজ্যের পাঁচটি সামন্ত অঞ্চল অধিকার করে শ্বশুর জয়ন্তকে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে জয়াপীড়ের খবর পৌছে যায় কাশ্মিরে। কাশ্মিরের সেনাপতি একদল সৈন্য নিয়ে পুঞ্জনগরে আসেন। এদের সাথে জয়াপীড় তার দুই স্ত্রী নিয়ে ফিরে যান কাশ্মিরে।

        রাজা জয়াপীড় দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার সুযোগে তাঁর শ্যালক জজ্জ কাশ্মিরের সিংহাসন দখল করেছিলেন। দীর্ঘদিন স্থায়ী যুদ্ধের পর জজ্জ পরাজিত হন। এভাবে সিংহাসন ফিরে পান জয়াপীড়।

adx ar

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

adx ar
Comments

You must be logged in to post a comment.

adx ar
POPULAR ARTICLES
About Author