এইচএসসি সারমর্ম সারাংশ বোর্ড কোয়েশ্চেন ও সাজেশন

adx Ar
Adx AR

সারমর্ম ও সারাংশ কি:

 

কোনো পদ্য বা গদ্যের মূলভাব বা বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করার নামই সারমর্ম বা সারাংশ। সাধারণত পদ্যের ভাব সংক্ষেপে প্রকাশকে সারমর্ম এবং গদ্যের বক্তব্য সংক্ষেপে প্রকাশ করাকে সারাংশ বলে। 

 

 

 

সারাংশ বা সারমর্ম লেখার সময় যা যা লক্ষ রাখতে হবে:

 

১. যে পাঠটুকুর সারমর্ম বা সারাংশ রচনা করতে হবে, সেটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

২. বাড়তি বিষয় বর্জন করতে হবে। কখনো কোনো পাঠের মূল ভাব উপমা রূপকের আড়ালে থাকতে পারে, তা বুঝে মূল ভাব লিখতে হবে।

৩. সারাংশ বা সারমর্মে উপমা, রূপক-এসব বাদ দিয়ে লিখতে হবে।

৪. প্রত্যক্ষ উক্তি বর্জন করে পরোক্ষ উক্তিতে লিখতে হবে।

৫. মূল অংশে উদ্ধৃতি থাকলে প্রয়োজনে সেই উদ্ধৃতির ভাবটুকু উদ্ধৃতি ছাড়া লিখতে হবে।

৬. বাহুল্য বর্জনপূর্বক মূলভাব সংক্ষেপে লিখতে হবে।

৭. মূল বক্তব্যটি নিজের ভাষায় সাজিয়ে সহজ ও সাবলীল করে লিখতে হয়।

 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ সারমর্ম ও সারাংশ।

 

 

১. ক্রোধ মানুষের পরম শত্রু। ক্রোধ মানুষের মনুষ্যত্ব নাশ করে। যে লোমহর্ষক কাণ্ডগুলি পৃথিবীকে নরকে পরিণত করিয়াছে, তাহার মূলেও রহিয়াছে ক্রোধ। যে মানুষকে পশুভাবাপন্ন করে, তাহা একবার ক্রুদ্ধ ব্যক্তির মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। যে ব্যক্তির মুখখানি সর্বদা হাসিমাখা, তুমি দেব ভাবে পরিপূর্ণ মনে কর, দেখিলেই তোমার মনে আনন্দ ধরে না, একবার ক্রোধের সময় সেই মুখখানির দিকে তাকাইও; দেখিবে, সেই স্বর্গের সুষমা আর নাই নরকাগ্নিতে বিকট রূপ ধারণ করিয়াছে। সমস্ত মুখ কী এক কালিমায় ঢাকিয়া গিয়াছে। তখন তাহাকে আলিঙ্গন করা দূরে থাকুক, তাহার নিকটে যাইতেও ইচ্ছা হয় না। সুন্দরকে মুহূর্তের মধ্যে কুৎসিত করিতে অন্য কোন রিপু ক্রোধের ন্যায় কৃতকার্য হয় না। [য. বো. ১১]

 

সারাংশ : মানুষের বড় শত্রæ ক্রোধ। কারণ ক্রোধ বা রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নানা অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। পৃথিবীতে যত অমানবিক নারকীয় ঘটনা ঘটে তার জন্য মূলত ক্রোধই দায়ী। ক্রোধ মানুষকে নিয়ে যায় পশুর পর্যায়ে।

 

২. মানুষের সুন্দর মুখ দেখে আনন্দিত হয়ো না। স্বভাবে যে সুন্দর নয়, দেখতে সুন্দর হলেও তার স্বভাব, তার স্পর্শ, তার রীতিনীতিকে ঘৃণা করে। দুঃস্বভাবের মানুষ মানুষের হৃদয়ে জ্বালা ও বেদনা দেয়, তার সুন্দর মুখে মনুষ্য তৃপ্তি পায় না। অবোধ লোকেরাই মানুষের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তার ফল ভোগ করে। মানুষ নিজ স্বভাবে সুন্দর না হলেও সে স্বভাবের সৌন্দর্যকে ভালোবাসে। স্বভাব গঠনে কঠিন পরিশ্রম ও সাধনা চাই নইলে শয়তানকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। যে স্বভাব গঠনের চেষ্টা করে, চিন্তা করে, সে এবাদত বা উপাসনা করে। [কু. বো. ১১]

 

সারাংশ : স্বভাবে সুন্দর না হলে মানুষ সত্যিকারের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। শারীরিক সৌন্দর্য দেখে শুধু বোকা লোকেরা ঠকে। অসুন্দর স্বভাবের মানুষও সুন্দর স্বভাবের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। স্বভাব গঠন সাধনার ব্যাপার; এই সাধনায় যে ব্যক্তি লিপ্ত সেই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালার এবাদত বা উপাসনা করে।

 

৩. তুমি জীবনকে সার্থক সুন্দর করতে চাও? ভাল কথা, কিন্তু সেজন্য তোমাকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করতে হবে। সব তুচ্ছ করে যদি তুমি লক্ষ্যের দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হতে পার, তবে তোমার জীবন সুন্দর হবে। আরও আছে। তোমার ভিতর এক ‘আমি’ আছে সে বড় দুরন্ত। তার স্বভাব পশুর মত বর্বর ও উচ্ছৃঙ্খল। সে কেবল ভোগবিলাস চায়। সে বড় লোভী। এই ‘আমি’ -কে জয় করতে হবে। তবেই তোমার জীবন সার্থক ও সুন্দর হয়ে উঠবে। [য. বো. ১৪; দি. বো. ১৪, ১০]

 

সারাংশ : জীবনকে সার্থকতায় মণ্ডিত করতে হলে মৃত্যুপণ করে সাধনা করতে হবে; যদি লক্ষ অভ্রান্ত থাকে তা হলে ব্যর্থ মনোরথ হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তোমাদের ভেতরের উচ্ছৃঙ্খল ‘আমি’কে সংযত করে অকুতোভয়ে সম্মুখে অগ্রসর হতে পারলে জীবন অবশ্যই সুন্দর ও সার্থক হয়ে উঠবে।

 

৪. মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণÑ মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এই বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিয়াছে, জগতের কল্যাণ সাধন করিতেছে; পশুবল ও অর্থবল মানুষকে বড় বা মহৎ করিতে পারে না। মানুষ বড় হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়। প্রকৃত মানুষই জাতীয় জীবনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন আনয়নে সক্ষম। [চ. বো. ১২]

 

সারাংশ : জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও মনুষ্যত্বের বলে মানুষ সৃষ্টির সেরা। পেশিশক্তি ও বিত্তের দাপট মানুষকে বড় করে তোলে না। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত। এ ধরনের মানুষের অবদানেই অর্জিত হয় জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতি।

 

৫. আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থের বা বিত্তের উপর নির্ভরশীল। লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি কেবল আগে যাবার নেশায় লক্ষ্যহীন প্রচণ্ডভাবে শুধু আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় না করতে পারে, তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই হয়তো লোপ পেয়ে যাবে।মা নুষের জীবন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেখান থেকে আর হয়তো নামবার উপায় নেই, এবার সিঁড়িটা না খুঁজলেই নয়। উঠবার সিঁড়িটা না খুঁজে পেলে আমাদের আত্মবিনাশ যে অনিবার্য তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না।[চ. বো. ১৫, সি. বো. ১৫, কু. বো. ১২]

 

সারাংশ : আজকের দুনিয়ায় লক্ষ্যহীন নেশার মতো মানুষ কেবল ধন-সম্পদ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করছে। এই যে অর্থ ও সম্পদের দিকে মানুষের নেশা, সে-নেশা তার আত্মবিকাশের পথ সংকীর্ণ করবে। কাজেই আত্মবিনাশের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ওপরে ওঠার সিঁড়ির সন্ধান পাওয়া প্রয়োজন। মনুষ্যত্ব ব্যাপক হারে লোপ পেতে থাকলে আমাদের ধ্বংস সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

 

৬. অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝা অতীতের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মত দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। আজই ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়বিক দুর্বলতায়। অতএব, অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাওÑ আর শুরু কর দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে। [ঢা. বো. ১১, ব. বো. ১৩]

 

সারাংশ : অতীতের ব্যর্থতার জন্য আফসোস করে বর্তমানকে নষ্ট করা উচিত নয়। বরং বর্তমানকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত সবচেয়ে বেশি। কারণ, আজকের সাধনাই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণ করবে। কারণ হতাশা জীবন শক্তিকে নিঃশেষিত কর‌‌।

 

 

৭. ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই হলো জ্ঞানীর কাজ। পিঁপড়ে-মৌমাছি পর্যন্ত যখন ভবিষ্যতের জন্য ব্যতিব্যস্ত তখন মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। ফকির-সন্ন্যাসী যে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আহার-নিদ্রা ভুলে পাহাড়-জঙ্গলে চোখ বুঁজে বসে থাকে, সেটা যদি নিতান্ত গঞ্জিকার কৃপায় না হয়, তবে বলতে হবে ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে। সমস্ত জীব-জন্তুর দুটো চোখ সামনে থাকবার মানে হল ভবিষ্যতের দিকে যেন নজর থাকে। অতীতের ভাবনা ভেবে লাভ নেই।

পণ্ডিতেরা ত বলে গেছেন, ‘গতস্য শোচনা নাস্তি’। আর বর্তমান সে-ত নেই বললেই চলে। এই যেটা বর্তমান সেই-এই কথা বলতে বলতে অতীত হয়ে গেল। কাজেই তরঙ্গ গোনা আর বর্তমানের চিন্তা করা, সমানই অনর্থক। ভবিষ্যৎটা হল আসল জিনিস। সেটা কখনও শেষ হয় না। তাই ভবিষ্যতের মানব কেমন হবে, সেটা একবার ভেবে দেখা উচিত।

 

সারাংশ : বিচক্ষণ মানুষ কেবল ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবিত হন। অতীত গত হয়েছে বলে গুরুত্বহীন, আর বর্তমানও এত ক্ষণস্থায়ী যে তাও গুরুত্ব পেতে পারে না। বস্তুত ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করার জন্য ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে ভাবনা-চিন্তাই দূরদর্শিতার লক্ষণ।

 

 

 

৮, শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুশিক্ষিত লোকমাত্রই স্বশিক্ষিত। আজকের বাজারে বিদ্যাদাতার অভাব নেই, এমনকি এক্ষেত্রে দাতাকর্ণেরও অভাব নেই এবং আমরা আমাদের ছেলেদের তাদের দ্বারস্থ করেই নিশ্চিত থাকি এই বিশ্বাসে যে, সেখানে থেকে তারা এতটা বিদ্যার ধন লাভ করে ফিরে আসবে যার সুদে তারা বাকি জীবন আরামে কাটিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এ বিশ্বাস নিতান্ত অমূলক‌‌।

মনোরাজ্যেও দান গ্রহণসাপেক্ষ, অথচ আমরা দাতার মুখ চেয়ে গ্রহীতার কথাটা একেবারে ভুলে যাই। এ সত্য ভুলে না গেলে আমরা বুঝতুম যে, শিক্ষকের সার্থকতা শিক্ষাদান করায় নয়, ছাত্রকে তা অর্জন করতে সক্ষম করায়। শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষার পথ দেখিয়ে দিতে পারেন, তার কৌতূহল উদ্রেক করতে পারেন, তার বুদ্ধি-বৃত্তিকে জাগ্রত করতে পারেন, মনোরাজ্যের ঐশ্বর্যের সন্ধান দিতে পারেন, তার জ্ঞানপিপাসাকে জ্বলন্ত করতে পারেন, এর বেশি আর কিছু পারেন না।

 

 

সারাংশ : সুশিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই স্বয়ংশিক্ষিত। অপরের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের ভাবনা মস্ত বড় ভুল। আমরা শিক্ষকের কাজ ছাত্রকে লেখাপড়ার কাজে সাহায্য করা, তার হৃদয়ে জ্ঞানের পিপাসা বৃদ্ধি করা এবং কৌত‚হল সৃষ্টি করা। মানুষমাত্রই নিজে নিজের শিক্ষক। জ্ঞানের ব্যাপারে শিক্ষক সহায়ক মাত্র।

 

 

 

 

 

 

 

৯. এটা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, পৃথিবীতে যেখানে এসে তুমি থামবে, সেখান হতেই তোমার ধ্বংস আরম্ভ হবে। কারণ তুমিই কেবল একলা থামবে, আর কেউ থামবে না। জগৎ প্রবাহের সঙ্গে সমগতিতে যদি না চলতে পার তো প্রবাহের সমস্ত সচল বেগ তোমার উপর এসে আঘাত করবে, একেবারে বিদীর্ণ বিপর্যস্ত হবে ।

কিংবা অল্পে অল্পে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কালস্রোতের তলদেশে অন্তর্হিত হয়ে যাবে। হয় অবিরাম চল এবং জীবনচর্চা কর, নয় বিশ্রাম কর এবং বিলুপ্ত হও, Ñ পৃথিবীর এই রকম নিয়ম। [কু. বো. ০৮]

 

 

 

সারাংশ : গতিময়তাই জীবন। গতির নিরন্তর ছন্দে প্রতিনিয়ত চলেছে জীবনপ্রবাহ। এই অবিরাম চলার মধ্যে যে গতি হারায় সেই হয়ে পড়ে নিশ্চল এবং মৃত। তাই জীবনের জন্য প্রয়োজন নিরন্তর চলমানতা। তা না হলে স্থবিরতা ও হতাশা গ্রাস করবে।

 

 

 

১০. রূপার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় আর ক’টি লোক। শতকরা নিরানব্বইটি মানুষকেই চেষ্টা করতে হয়, জয় করে জিততে হয় তার ভাগ্যকে। বাঁচে সেই যে লড়াই করে প্রতিক‚লতার সঙ্গে। পলাতকের স্থান জগতে নেই। সমস্ত কিছুর জন্যই চেষ্টা দরকার। চেষ্টা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। সুখ চেষ্টারই ফল-দেবতার দান নয়। তা জয় করে নিতে হয়, আপনা আপনি পাওয়া যায় না। সুখের জন্য দু’রকম চেষ্টা দরকার, বাইরের আর ভিতরের। ভিতরের চেষ্টার মধ্যে বৈরাগ্য একটি। বৈরাগ্যও চেষ্টার ফল, তা অমনি পাওয়া যায় না। কিন্তু বাইরের চেষ্টার মধ্যে বৈরাগ্যের স্থান নেই।

 

 

সারাংশ : প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিক‚লতার সঙ্গে সংগ্রাম করেই সৌভাগ্যকে ছিনিয়ে আনতে হয়। সৌভাগ্যবান সেই যে চেষ্টা করে, সংগ্রাম করে। যে চেষ্টা করে, সংগ্রাম করে সেই টিকে থাকে। বাঁচার অধিকার অর্জন করতে পারলেই সুখপাখি তার হাতে এসে ধরা দেয়। দুই ধরনের চেষ্টার মধ্যে বৈরাগ্য অন্যতম। বৈরাগ্যের জন্যও চেষ্টা দরকার।

 

 

১১. কিসে হয় মর্যাদা? দামি কাপড়, গাড়ি-ঘোড়া, না ঠাকুর-দাদার কালের উপাধিতে? না, মর্যাদা এসব জিনিসে নেই। আমি দেখতে চাই তোমার ভিতর, তোমার বাহির, তোমার অন্তর। আমি জানতে চাই, তুমি চরিত্রবান কি-না, তুমি সত্যের উপাসক কি-না।

তোমার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরুয়, তোমায় দেখলে দাস-দাসী দৌড়ে আসে, প্রজারা তোমায় দেখে সন্ত্রস্ত হয়, তুমি মানুষের ঘাড়ে চড়ে হাওয়া খাও, মানুষকে দিয়ে জুতা খোলাও, তুমি দিনের আলোতে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করো। বাপ-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি তোমায় আদর করেন, আমি তোমায় অবজ্ঞা বলবো, যাও।

 

 

সারাংশ : যারা সত্যের উপাসক, চরিত্রবান ও মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন তারাই জীবনে সত্যিকার মর্যাদা লাভ করে। অর্থবিত্ত, বাড়ি, গাড়ি বংশ গৌরবের ওপর মর্যাদা নির্ভর করে না। মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে মহৎ মানবিক গুণাবলির ওপর।

 

 

 

১১. সকল প্রকার কায়িক শ্রম আমাদের দেশে অমর্যাদাকর বলে বিবেচিত হয়ে আসতেছে। শ্রম যে আত্মসম্মানের অণুমাত্র হানিজনক নহে এবং মানুষের শক্তি, সম্মান ও উন্নতির ইহাই প্রকৃষ্ট ভিত্তি, এ বোধ আমাদের মধ্যে এখনও জাগে নাই। জগতের অন্যত্র মানবসমাজ শ্রমসামর্থ্যরে উপর নির্ভর করে সৌভাগ্যের সোপানে উঠছে আর আমরা কায়িক শ্রমকে ঘৃণা করে দিন দিন দুর্গতি ও হীনতায় ডুবে যাচ্ছি।

যারা শ্রমবিমুখ বা পরিশ্রমে অসমর্থ, জীবন সংগ্রামে তাদের পরাজয় অনিবার্য। এই প্রতিদ্ব›িদ্বতার যুগে অযোগ্যের পরিত্রাণ নাই। যারা যোগ্যতম, তাদেরই বাঁচবার অধিকার এবং অযোগ্যের উচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং, পরিশ্রমের অমর্যাদা আত্মহত্যারই নামান্তর।

 

 

সারাংশ : কায়িক শ্রম আমাদের দেশে আজও মর্যাদা লাভ করেনি। অথচ একে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে পৃথিবীর সভ্য ও উন্নত জাতিগুলো সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করছে। সেক্ষেত্রে কায়িক পরিশ্রমকে ঘৃণা করে আমরা জীবন-সংগ্রামে পশ্চাৎপদ হয়ে পড়ছি। শ্রম-বিমুখতার চেয়ে মারাত্মক আর কিছু হতে পারে না। যারা কায়িক পরিশ্রম করাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে থাকে তারা প্রকারান্তরে আত্মহননের দিকেই এগিয়ে চলছে।

 

 

১২. মানুষের জীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জীবসত্তা সেই ঘরের নিচের তলা, আর মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব উপরের তলা। জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা, শিক্ষাই আমাদের মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্য জীব-সত্তার ঘরেও সে কাজ করে। ক্ষুৎ পিপাসার ব্যাপারটি মানবিক করে তোলার ভার অন্যতম কাজ।

 

কিন্তু তার আসল কাজ হচ্ছে মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অন্য কথায় শিক্ষার যেমন প্রয়োজনের দিক আছে, তেমনি অপ্রয়োজনের দিকও আছে, আর অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক সে শেখায় কী করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। কী করে, মনের মালিক হয়ে, অনুভ‚তি ও কল্পনার রস আস্বাদন করা যায়।

 

সারাংশ : জীবসত্তার চাহিদা পূরণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও মানবসত্তার জাগরণ কিংবা মনুষ্যত্ব অর্জন করাই জীবনের আসল লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষার কাজই হচ্ছে মানুষের অন্তরে মনুষত্ববোধ জাগ্রত করা, তাকে জীবনের পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া।

 

 

 

১৩. জীবনের একটি প্রধান লক্ষ্য হাসি ও আনন্দ। যার প্রত্যেক কাজে আনন্দ স্ফ‚র্তি তার চেয়ে সুখী আর কেউ নয়। জীবনে যে পুরোপুরি আনন্দ ভোগ করতে জানে আমি তাকে বরণ করি। স্থূল দৈনন্দিন কাজের ভেতর সে এমন একটা কিছুর সন্ধান পেয়েছে যা তার নিজের জীবনকে সুন্দর ও শোভনীয় করেছে এবং পারিপার্শ্বিক দশজনের জীবনকে উপভোগ্য করে তুলেছে। এই যে এমন একটা জীবনের সন্ধান যার ফলে সংসারকে মরুভ‚মি বোধ না হয়ে ফুলবাগান বলে মনে হয়। সে সন্ধান সকলের মেলে না। যার মেলে সে পরম ভাগ্যবান। এরূপ লোকের সংখ্যা যেখানে বেশি সেখান থেকে কলুষ বর্বরতা আপনাআপনি দূরে পালায়। সেখানে প্রেম, পবিত্রতা সর্বদা বিরাজ করে।

 

সারাংশ : হাসি ও আনন্দ মানবজীবনে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের পরিচয় বহন করে। ক্ষুদ্র বা বৃহৎ সকল কর্মে আনন্দঘন পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে পারিপার্শ্বিক জীবন হয় সুন্দর ও শোভন। ফলে সমাজজীবন থেকে কদর্যতা দূর হয়ে প্রেম ও প্রীতির সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়।

adx ar

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

adx ar
Comments

You must be logged in to post a comment.

adx ar
POPULAR ARTICLES
About Author