সম্রাট আকবর প্রাথমিক জীবন ও রাজ্য বিজয় পর্ব-০১

adx Ar
Adx AR

সম্রাট আকবর প্রাথমিক জীবন ও রাজ্য বিজয় পর্ব-০১

প্রাথমিক জীবন: মহামতি সম্রাট আকবর ভারতের মুঘল সম্রাটদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্যাক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।তিনি সম্রাট হুমায়ুন ও হামিদা বানু দম্পতির সন্তান। আকবর 1542 খ্রিষ্টাব্দের 23 নভেম্বর সিন্ধুর অমরকোটে জন্মগ্রহণ করেন। আকবরের জন্মের এক বছর পরেই হুমায়ুনকে স্ত্রী হামিদা বানুসহ আশ্রয়ের সন্ধানে পারস্যে পালিয়ে যেতে হয়।আর তখন তাদের শিশুপুএ আকবর কান্দাহারে চাচা কামরানের জিম্মায় জওহর, শামসুদ্দিন খান,বিবি আনগা ও মাহম আনগার তত্ত্বাবধানে পিতা-মাতার স্নেহবঞ্চিত অবস্থায় লালিত-পালিত হতে থাকেন।বিদ্যানুরাগী হুমায়ুন পুএ আকবরের পড়াশুনার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করেন।

1551 খ্রিষ্টাব্দে নয় বছর বয়সে আকবরের সাথে চাচা হিন্দালের মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়।দিল্লির সিংহাসন পুনরুদ্ধারের পর পরই সম্রাট হুমায়ুন 1555 খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।তবে মৃত্যুর আগেই তিনি পুএ আকবরকে তার উওরাধিকারী মনোনীত করেন এবং বিশ্বস্ত অনুচর বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে আকবরকে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সিংহাসন আরোহণ: পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কালানৌরে সিকান্দার শুরের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আকবর তার পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যু সংবাদ জানতে পারেন।মুঘল সিংহাসনের শূন্যতা পূরণের উদ্দেশ্যে বৈরাম খান তখনই কালানৌরের উদ্যানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আকবরকে দিল্লির মুঘল সম্রাট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

1556 খ্রিষ্টাব্দের 14 ফেব্রুয়ারি আকবর জালালউদ্দিন মুহাম্মদ আকবর উপাধি নিয়ে মুঘল সিংহাসনে অভিষিক্ত হন।তার বয়স তখন মাএ 13 বছর।1560 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আকবর বৈরাম খানের অভিভাবকত্বে রাজ্য শাসন করেন। আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় ভারতের সার্বিক অবস্থা: আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় ভারতে এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল।

এ সময় পাঞ্জাবে সিকান্দার শুর, সাম্রাজ্যের উওরাঞ্চলে আদিল শাহ শুর শক্তি সঞ্চয় করে ভারত থেকে পুনরায় মুঘল কর্তৃত্ব ধ্বংস করতে তৎপর ছিলেন। মোবার,বুন্দি,যোধপুর, সিন্ধু,মুলতান,গুজরাট এবং মালব ইত্যাদি রাজ্যগুলো ছিল দিল্লির সম্পৃর্ণ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত।মুঘল কর্তৃত্ব কেবল দিল্লি ও আগ্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল শোচনীয়।এ সময় দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় উওর ভারতে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

এরূপ পরিস্থিতিতে অভিজাতবর্গ আকবরকে ভারত ত্যাগ করে কাবুলে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।একমাএ বৈরাম খানই তাকে সাহসের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অনুরোধ করেন।আকবর তার অভিভাবক বৈরাম খানের পরার্মশ গ্রহণ করে তার সহায়তায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সম্রাট আকবেরর রাজ্য বিজয়: মধ্যযুগের ভারতীয় শাসকদের মধ্যে সাম্রাজ্য সংগঠক ও বিজেতা হিসেবে সম্রাট আকবর অনন্য স্থান দখল করে আছেন।তার সিংহাসনে আরোহণের সময় মুঘল সাম্রাজ্যের সীমা পাঞ্জাব, দিল্লি ও আগ্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।তিনি 1561-1601 খ্রি. পর্যন্ত সুদীর্ঘ 40 বছরে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ: মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ভারতে নিজের অবস্থানকে সুসংগত করা জন্য আকবার দিল্লি-আগ্রা জয় করতে অগ্রসর হন। এ সময় তিনি শক্তিশালী আফগান শত্রু হিমুর মুখোমুখি হন।হিমু ছিলেন শুর সুলতান আদিল শাহ শুরের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপতি।হুমায়ুনের মৃত্যুর পর উওর ভারতে হিন্দু আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিল্লি ও আগ্রার মুঘল শাসনকর্তা তরজী বেগের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তরজী বেগ পরাজিত হন এবং হিমু দিল্লি আগ্রা জয় করেন।মুঘল সৈন্যদের একত্রিত করে 1556 খ্রিষ্টাব্দের 5 নভেম্বর পানিপথের বিখ্যাত রণক্ষেত্রে হিমুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন।

বৈরাম খান ও আকবরের নেতৃত্বাধীন 20,000 সৈন্যের মুঘল বাহিনী হিমুর লক্ষাধিক সৈন্যের বিশাল বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে।যুদ্ধরত হিমুর চোখে একটি তীর বিদ্ধ হওয়ায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং অচেতন অবস্থায় তাকে বন্দি ও পরে হত্যা করা হয়। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য: ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মুঘলদের জন্য এ যুদ্ধ ছিল একটি মীমাংসাত্ম যুদ্ধ।1526 খ্রিষ্টাব্দে ভারতে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের যে সূচনা হয়েছিল 1556 খ্রিষ্টাব্দের পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটে।

কাজেই বলা যায়, পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ মুঘলদের হারানোর গৌরব পুনরায় ফিরিয়ে দেয়। মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের অবসান: পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্বের পর আকবর পাঞ্জাবে গোলযোগকারী সিকান্দারশুরের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন।মানকোট দুর্গে আট মাস অবরুদ্ধ থাকার পর সিকান্দার শুর মুঘল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।শুর সুলতান আদিল শাহ শুর 1557 খ্রিষ্টাব্দে মুঙ্গেরে বাংলার শাসনকর্তা কর্তৃতক নিহত হন। মালব ও গন্ডোয়ানা অধিকার: সম্রাট আকবর আদম খানের নতৃত্বে 1561 খ্রিষ্টাব্দে মালব অধিকার করেন।

পরবর্তী সময়ে রাজা রাজবাহাদুর আকবরের বশ্যতা স্বীকার করলে সম্রাট তাকে মনসবদার নিয়োগ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্রাট 1564 খ্রিষ্টাব্দে আসফ খানের মাধ্যমে মধ্য গন্ডোয়ানা আক্রমণ করে গন্ডোয়ানার চান্দেলা বংশীয় রাজা বীর নারায়ণের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন।রাজমাতা দুর্গাবতী বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেও মুগল আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থ হন এবং রাজা বীর নারায়ণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত হন।ফলে গন্ডোয়ানা মুঘল রাজ্যভুক্ত হয়।

adx ar

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

adx ar
Comments
Arfan - Jun 8, 2023, 2:54 PM - Add Reply

Good

You must be logged in to post a comment.

You must be logged in to post a comment.

adx ar
POPULAR ARTICLES
About Author