ড্রাগন কি বাস্তবেই ছিল?

adx Ar
Adx AR

ড্রাগন এক অদ্ভুত প্রাণী

চীনাদের পতাকায় কেন ড্রাগনের ছবি? 

        ড্রাগন নামের অদ্ভুত ভয়ঙ্কর প্রাণী। মস্ত অজগরের মতো থলথলে দেহ! পিঠে করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা। মুখের খিচুনিতে ভয়ঙ্কর হিংস্রতা। চোখ দুটো যেন আগুনের ভাটির মতো জ্বলছে। মুখ থেকে বেরুচ্ছে তাজা আগুনের গোলা।—অমন গা ছমছম করা ড্রাগনের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে একটি দেশের ছবি। চোখ পিটপিটে, নাক থ্যাবড়া, একটু বেঁটে আর ফরসা-নাদুসনুদুস মানুষদের সে দেশটি হচ্ছে চীন। চীনের বিভিন্ন ছবি, চীনাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাটে ড্রাগনের ছবি খুঁজে পাওয়া যাবেই। ১৯১১-তে চীনে বিপ্লব হওয়ার আগ পর্যন্ত চীনাদের পতাকা ছিল হলুদ রঙের কাপড়ের ওপর কালো রঙের ড্রাগন মূর্তি। সুতরাং বোঝা যায় আদিকাল থেকে চীনাদের জীবনে ড্রাগনের একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল।

চীনাদের প্রচলিত কাহিনী 

        চীনাদের এক পৌরাণিক কাহিনীর ভেতর খুঁজে পাওয়া যায় ড্রাগনের রহস্য – সে বহুকাল আগের কথা। তখনো পৃথিবী নামের কোনো কিছু ছিল না। চারদিক ছিল ভীষণ রকম গোলমেলে। কোনো নিয়মনিষ্ঠার বালাই ছিল না। সব কিছু যার যেমন ইচ্ছে কাজ করে যাচ্ছে। অবস্থাটা এমন, যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সমস্ত সৃষ্টি। কিন্তু না:–

 গোলমেলে অবস্থারও একদিন পরিবর্তন এল। ধীরে ধীরে প্রকাশ পেল দুই শক্তির কথা। এই দুই শক্তির একটি হল ইয়াং আর অন্যটি ইন চারদিকে যা কিছু সৃষ্টি সব কিছুকে এ দুটি শক্তি বৃত্তের মতো ঘিরে রইল। বৃত্তের একটি অংশ হল কালো অন্যটি সাদা। তাই বুঝি চীনারা তাদের সাজসজ্জার উপকরণ হিসেবে সাদা আর কালো রঙকে বেশি পছন্দ করে। চীনাদের ধারণা ইয়াং হচ্ছে পুরুষ। সে ঔজ্জ্বল্য, উষ্ণতা, কর্মক্ষমতার উৎস। আর ইন হচ্ছে অন্ধকার, নীরবতা, শীতলতা ও কোমলতার প্রতীক_অর্থাৎ নারী।

        দীর্ঘ সময় ইয়াং এবং ইন পাশাপাশি অবস্থান করে। অবশেষে তাদের মধ্য থেকে জন্ম নেয় ‘পানকু’ নামের এক পৌরাণিক মানব। এই পানকুই পরে রূপ নেয় পৃথিবীতে। পানকু অর্থাৎ পৃথিবীর আনন্দের জন্য সৃষ্টি করা হয় চাঁদ, সূর্য এবং অসংখ্য তারা। পানকুর মাথা থেকে হয় পর্বত, নিশ্বাস থেকে হয় মেঘ, তার ভরাট আর তীব্র কণ্ঠস্বর থেকে হয় বজ্র, তার শিরা-উপশিরা থেকে হয় নদ-নদী, চুল আর গায়ের পশম থেকে হয় গাছপালা, তার দাঁত আর হাড়গোড়গুলো সব মাটির নিচে লুকানো বিভিন্ন ধাতু। খনি হিসেবে পরবর্তীকালে আমরা যা আবিষ্কার করেছি। আর তার গায়ের ওপর কিলবিলে যে সমস্ত পোকামাকড় হেঁটে বেড়াত, সেগুলো হচ্ছে মানুষ।

        এই পানকু নামের পৃথিবীর তিন জন সহকারী ছিল। তারা পানকুর যে কোনো সাহায্যে এগিয়ে আসত। সহকারী তিন জন হচ্ছে ড্রাগন, ফিনিক্স নামের এক অদ্ভুত পাখি আর একটি প্রকাণ্ড কচ্ছপ। ধীরে ধীরে চীনের ইতিহাস থেকে ফিনিক্স আর অতিকায় কচ্ছপের কথা হারিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু প্রচুর শক্তির আধার হিসেবে বেঁচে থাকে ড্রাগন। চীনাদের কল্পনার ড্রাগন যে কোনো প্রয়োজনে শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রধানত প্রচুর ফসল প্রদানকারী, বৃষ্টিপাত, মানুষের কল্যাণ আর শক্তির প্রতীক হিসেবে ড্রাগনের কাল্পনিক মূর্তি গড়া হয়,–ছবি আঁকা হয়। ক্রমে ড্রাগন হয়ে পড়ে চীনের জাতীয় প্রতীক। চীন সম্রাটের সিংহাসনে সিংহ নয় বরং ড্রাগনের ছবিই খোদাই করা হয়। একটি জাতির অস্তিত্ব প্রকাশ করে পতপত করে ওড়ে যে পতাকা, তার মধ্যেও কালো ড্রাগনের ভয়ঙ্কর ছবি। ১৯১১-র অক্টোবর ছিল চীনা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কাল। এ সময় চীনের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিনের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ডা. সানইয়াত সেনের নেতৃত্বে চীনের জনসাধারণ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। একসময় সফল হয় বিপ্লবীরা। রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। প্রবর্তিত হয় গণতন্ত্র। সুতরাং রাষ্ট্রের এই ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পতাকারও পরিবর্তন ঘটে। ড্রাগনের ছবিযুক্ত হলুদ পতাকা আর চীনাদের অস্তিত্ব হয়ে বাতাসে ওড়ে না। তার বদলে পাঁচরঙা ডোরাকাটা রাষ্ট্রীয় পতাকা গ্রহণ করা হয়। পাঁচটি জাতির প্রতীক হিসেবে এই পাঁচ ডোরার ব্যবহার। এর মধ্যে লাল রঙের ডোরাটি হল চীনাদের, হলদে রঙেরটি মাঞ্চুরীয়দের, নীল রঙের ডোরা মঙ্গোলদের, সাদা রঙেরটি হল তুর্কিদের এবং কালো রঙেরটি তিব্বতীয়দের প্রতীক। আসলে চীনারা মনে করত মাঞ্চুরীয়, মঙ্গোল, তুর্কি, তিব্বতীয় আর নিজেরা মিলে চীনা জাতিতে রূপলাভ করেছে। তাই সবার সম্মান রক্ষা করার জন্যই গ্রহণ করা হয়েছে পাঁচরঙা পতাকা।

        পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তি থেকে যে ড্রাগনের জন্ম তাকেই সমস্ত শক্তির উৎস হিসেবে চীনারা গ্রহণ করে। আর সেই বিশ্বাসের ড্রাগনই সমস্ত রাজতন্ত্রের যুগে চীনের পতাকা জুড়ে বসে থাকে! বিপ্লবের পরের পাঁচরঙা পতাকাও একরকম বিশ্বাসেরই প্রতীক। তবে সে বিশ্বাসে কিংবদন্তি নয়, কিছুটা আধুনিক চিন্তা কাজ করেছে।

adx ar

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

adx ar
Comments

You must be logged in to post a comment.

adx ar
POPULAR ARTICLES
About Author