রাণী ক্লিওপেট্রাঃ সুন্দরী রাণীর উপাখ্যান

adx Ar
Adx AR

সুন্দরী এক রাণীঃ ক্লিওপেট্রা

 

      প্রাচীন মিসরের এক মনোরম নগরী আলেকজান্দ্রিয়া। বিশ্ববিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডার গড়ে তুলেছিলেন এই নগরী। এখানেই জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে এক রাজকন্যা। ভবিষ্যতের রানী—রানী ক্লিওপেট্রা। তখন খ্রিষ্টপূর্ব ৬৮ কি ৬৯ অব্দ। মিসরের রাজা একাদশ টলেমির ঘরে জন্ম নেন ইতিহাসের এই বিখ্যাত মহিলা। অপূর্ব রূপ নিয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন। এ সময় মিসরের রাজবংশের উপাধি ছিল টলেমি। আলেকজান্ডারের এক মেসেডোনীয় জেনারেল টলেমি, সম্রাটের মৃত্যুর পর নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে এই রাজবংশের রাজারা টলেমি নামে পরিচিত।

        একাদশ টলেমির আদুরে মেয়ে ক্লিওপেট্রা। তাকে বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হয়। রূপের সাথে গুণের মিশ্রণে হয়ে ওঠেন অনন্যা।

        ক্লিওপেট্রর বয়স যখন আঠার তখন মারা যান একাদশ টলেমি। পিতার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েন ক্লিওপেট্রা। কিন্তু ভেঙে পড়লেন না। সিংহাসনের প্রশ্নে বিতর্কের ঝড় উঠল। সবাই ক্লিওপেট্রার গুণের কথা জানে। রাজ্য পরিচালনায় তার দক্ষতা কম কিসে। কিন্তু একদল তাকে সমর্থন দিতে চায় না। তারা সমর্থন করে ক্লিওপেট্রার ভাই দ্বাদশ টলেমিকে। একদিন সমস্ত বিতর্কের অবসান হল। সিংহাসনের প্রশ্নে আপস হয়ে গেল। ভাইবোন একত্রে সিংহাসনে বসলেন।

        কিন্তু সিংহাসনে বসলে হবে কি! ষড়যন্ত্রের জাল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। বিরোধীরা ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগল। শেষ পর্যন্ত হার হল ক্লিওপেট্রার। তাকে নির্বাসন দেওয়া হল সিরিয়ায়। কিন্তু বুদ্ধিমতী ক্লিওপেট্রা এত সহজে দমলেন না। শক্তি সঞ্চয় করলেন। পরে ভাইকে পরাজিত করে সিংহাসন দখল করেছিলেন তিনি।

        প্রাচীন ঐতিহাসিকরা ক্লিওপেট্রার গুণে পঞ্চমুখ ছিলেন। তাদের ভাষায় ক্লিওপেট্রা বিভিন্নরূপে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। মোহনীয় রূপের মতোই মিষ্টি ছিল তার কণ্ঠস্বর। বাককুশলতা আর রাজনৈতিক দক্ষতা তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

      

  ইতিহাসের প্রাচীন যুগে জন্ম নিয়েও ক্লিওপেট্রা অনর্গল দুটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। এ ছাড়াও গ্রিক সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতিতে তার প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায়। একজন দক্ষ সেনাপতির মতোই তার সামরিক দক্ষতা ছিল।

        একদিন বিয়ের সানাই বেজে উঠল, অপূর্ব সাজে সাজলেন ক্লিওপেট্রা। এই গুণবতীকে কে বিয়ে করেছেন। হ্যাঁ, রোমের বিখ্যাত সম্রাট জুলিয়াস সিজার। রানী ক্লিওপেট্রার শক্তি অনেক বেড়ে গেল। নিজের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পেলেন এবার। আলেকজান্দ্রিয়া থেকে দক্ষ মুদ্রা প্রস্তুতকারীদের নিয়ে এলেন। তাদের দিয়ে উন্নত করা হল রোমের টাকশাল। ক্লিওপেট্রার নির্দেশে জ্যোতির্বিদগণ রোমান ক্যালেন্ডারের সংস্কার করেন। এর ভিত্তিতে দাঁড়িয়েই আধুনিককালের ক্যালেন্ডার তৈরি হচ্ছে।

        মাত্র এক বছর আট মাস রোমে থেকেছিলেন ক্লিওপেট্রা। এরই মধ্যে সম্রাট জুলিয়াস সিজার মারা গেলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রাকে ফিরে আসতে হল মিসরে।

        খ্রিষ্টপূর্ব ৩২ অব্দে আবার বিয়ে হয় ক্লিওপেট্রার। ইতিহাসের আরেক বিখ্যাত ব্যক্তির প্রাসাদ এবার আলো করলেন তিনি। বিখ্যাত রোম সেনাপতি মার্ক এন্টনির ঘরে রানী হয়ে এলেন ক্লিওপেট্রা। এ সময় রোমের সম্রাট ছিলেন অগাস্টাস। মার্ক এন্টনির সাথে সম্রাটের সদ্ভাব ছিল না। ক্লিওপেট্রা এসে যেন এন্টনির শক্তি আরো বাড়িয়ে দিলেন। এবার তার মাথায় রোমের সিংহাসনের স্বপ্ন। সিংহাসনের জন্য সরাসরি যুদ্ধ হল। কিন্তু পরাজিত হলেন এন্টনি। দুঃখ আর গ্রানিতে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন তিনি।

        এবার সম্রাটের সমস্ত রাগ যেন উপচে পড়ল রানী ক্লিওপেট্রার ওপর। বন্দি হলেন ক্লিওপেট্রা। উৎকণ্ঠায় অধীর হয়ে পড়ল রোমবাসী। না জানি কী শাস্তি অপেক্ষা করছে ক্লিওপেট্রার ভাগ্যে। ক্লিওপেট্রর বুকটাও কেঁপে ওঠে। না—মৃত্যুভয়ে নয়; অপমান ও লাঞ্ছনার ভয়ে। কী করা যায়! কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এ অপমানের হাত থেকে! বেশি ভাবতে হল না বুদ্ধিমতী ক্লিওপেট্রাকে। বুদ্ধি পেয়ে গেলেন তিনি।

        তখনো মার্ক এন্টনির মৃতদেহের সৎকার হয় নি। স্বামীর মৃতদেহ শেষবারের মতো দেখার জন্য ক্লিওপেট্রা আবেদন করলেন। সম্রাট মঞ্জুর করলেন সে আবেদন। বাইরে এসে সুযোগ বুঝে বিশ্বস্ত অনুচরদের সাথে গোপন পরামর্শ করলেন ক্লিওপেট্রা।

        কড়া পাহারার মধ্য দিয়ে বন্দিনী ক্লিওপেট্রা ফিরে এলেন। ঘরের দরজা এঁটে সোজা এসে দাঁড়ালেন আয়নার সামনে। খুব মন দিয়ে সাজলেন ক্লিওপেট্রাকে যেন চেনাই যায় না। গ্রিকদেবী ভেনাসের মতো করে সাজলেন।

        এদিকে দিন গড়িয়ে যায়। ক্লিওপেট্রার দরজা খোলার নামটিও নেই। পাহারাদারেরা বিরক্ত হল। অনেক ডাকাডাকিতেও কাজ হল না। অবশেষে দরজা ভাঙার হুকুম হল! ভেতরে ঢুকে তো সবার চক্ষু চড়কগাছা থমকে গেল সবাই, দেবী ভেনাস যেন পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন। এলো চুল হালকা বাতাসে মৃদু দুলছে। ভুল ভাঙতে দেরি হল না। না—দেবী নন। দেবী সাজে রানী ক্লিওপেট্রা। পাশেই একঝুড়ি ডুমুর। ক্লিওপেট্রার সারা শরীর বিষে নীল হয়ে গেছে। আত্মহত্যা করেছেন ক্লিওপেট্রা।

        কথিত আছে, ক্লিওপেট্রা গোপনে তার কক্ষে এককুড়ি ডুমুর আনিয়েছিলেন। ডুমুরে লুকোনো ছিল বিষাক্ত সাপ। সেই সাপের দংশনে সমস্ত লজ্জা সমস্ত গ্লানির হাত থেকে রেহাই পেলেন তিনি। ইতিহাসের নায়িকা ক্লিওপেট্রা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলে গেলেন।

adx ar

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

adx ar
Comments

You must be logged in to post a comment.

adx ar
POPULAR ARTICLES
About Author