গিলগামেশঃ এক বীর রাজার বীরত্বগাথা

adx Ar
Adx AR

গিল্গামেশঃ এক বীর রাজা 

 চকচকে জল বুকে নিযে বয়ে চলছে ফোরাত নদী। উত্তরের পাহাড়ে-অঞ্চল থেকে সেই কবে যাত্রা শুরু হয়েছে—তারপর আর চলার বিরাম নেই। পূর্ব-দক্ষিণে একটানা চলে একদিন এসে মিশেছে পারস্য উপসাগরে৷ সাগরে মেশার কিছুটা আগে ফোরাতের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জমজমাট এক শহর। শহরটির নাম ইউরুক। এই ইউরুকের রাজপ্রাসাদকেই উজ্জ্বল করে রেখেছেন বীর রাজা গিলগামেশ। হাজার হাজার বছর আগে কোনো একসময় ইউরুকে রাজত্ব করেছেন তিনি।

        রাজা গিলগামেশকে পুরোপুরি মানুষ বলা চলে না। তিনি দুই-তৃতীয়াংশ দেব ও এক-তৃতীয়াংশ মানব। তার মাতা দেবী শ্ৰেষ্ঠ নিনসুন। পিতা প্রধান পুরোহিত লুগলবান্দা। এ কারণেই বুঝি গিলগামেশের বীরত্ব আর জ্ঞানের সঙ্গে সাধারণ মানুষ এঁটে উঠতে পারত না ।

        গিলগামেশের ক্ষমতার দাপট দেখতে দেখতে একসময় স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে এল হিংসের ভাব। একদিন দেবতারা বসলেন গোপন পরামর্শে। শেষে সিদ্ধান্ত হল, গিলগামেশের সমকক্ষ একজন শক্তিমান পুরুষ সৃষ্টি করতে হবে। এর ফলেই বুনো ষাঁড়ের শক্তি নিয়ে জন্ম হল ‘এনকিদুর’। শুরু হল এনকিদুর সঙ্গে গিলগামেশের লড়াই। লড়াই করতে গিয়ে দু-জনই দু-জনের শক্তি দেখে অবাক হলেন। বীরের সঙ্গে বীরের তো আর শক্রতা থাকতে পারে না। তাই তাদের মধ্যে গড়ে উঠল গভীর বন্ধুত্ব।–এক-দুই করে দিন যেতে লাগল। এই বন্ধুত্ব দেখে দেবতারা মোটেও খুশি হতে পারলেন না। অবশেষে দেবতাদের অভিশাপে রোগে আক্রান্ত হলেন ‘এনকিদু’। গিলগামেশের সামনেই ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন।

        বন্ধুর মৃতদেহ দেখে বুক কেঁপে ওঠে গিলগামেশের। অত বড় বীর মৃত্যুর কোলে অসহায়ের মতো কেমন নিশ্চল শুয়ে আছে। না—“না মৃত্যু আমি চাই না! আমাকে অমর হতে হবে”—চিৎকার করে ওঠেন গিলগামেশ। অমরত্বের নেশায় পাগল হয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। অবশেষে অনেক পথ পেরিয়ে দেহমন আচ্ছন্ন করা ক্লান্তি নিয়ে এসে দাঁড়ান মৃত্যু সাগর তীরে। শুনেছেন সাগরের ওপারে থাকেন পৃথিবীর একমাত্র অমর মানুষ উৎনাপিশতিম। যে করেই হোক গিলগামেশ তার কাছ থেকে জেনে নেবেন অমর হওয়ার গোপন রহস্য। মৃত্যু সাগরের খেয়াতরীর মাঝি উরশানাবি পার করে দেন গিলগামেশকে।

        অনেক বলার পর উৎনাপিশতিম রাজি হন অমরত্বের সন্ধান দিতে। মৃত্যু সাগরের গভীরে জন্মায় এক সুগন্ধি কাঁটাগাছ। সেই সুগন্ধি গুল্ম খেলেই অমর হওয়া যাবে।

        এবার আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে গিলগামেশের মুখ। কঠিন সঙ্কল্প নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মৃত্যু সাগরে। এক ডুবে তুলে আনেন সুগন্ধি গুল্ম। গিলগামেশের ঠোঁট বেয়ে উপচে পড়ছে খুশি। এবার অমর হবেন—দেবতাদের সমকক্ষ হবেন তিনি। আঃ কী আনন্দ! সামনের ঝরঝরে ঝরনায় মনের সুখে গোসল করেন। হঠাৎ এ কী হল! রাজ্যির ঘুম এসে ভারী করে দিল গিলগামেশের চোখের পাতা। কী আর করা। শিথানে গুল্মটি রেখে পাথরের ওপর ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। এই ফাঁকে দেবতাদের ইশারায় সাপ এসে খেয়ে ফেলে সেই অমর হওয়ার লতা।

        একসময় ঘুম ভাঙে গিলগামেশের। সব দেখেশুনে পাথর হয়ে গেলেন যেন: অমর হওয়ার স্বপ্নসাধ ভেঙে গুড়িয়ে গেল। পরে ধীরে ধীরে বুঝলেন—মানুষের দেহ অমর হবার নয়, মানুষ অমর হয় তার গৌরবময় কীর্তিতে।

        প্রায় হাজার বছর ধরে এ কাহিনী লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর অনেককাল পর। দজলা-ফোরাত (টাইগ্রিস, ইউফ্রেতিস) নদীর চারদিকের অঞ্চল– এতকাল ধরে মেসোপটেমীয় সভ্যতা নামে যার পরিচিতি—এখন তার রমরমা অবস্থা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে চারদিকে। এই অঞ্চলে এসময় শাসন করতেন আসুর বানিপাল নামে এক জ্ঞানী সম্রাট।

        তিনি প্রকান্ড লাইব্রেরী তৈরী করেছিলেন। লাইব্রেরীতে রাখার জন্য তাঁর নির্দেশে গ্রন্থবদ্ধ করা হয় এই মহাকাব্যটি। কাদামাটির গায়ে খাঁজ কেটে কেটে তখন লেখা হত। এ ধরনের লিপিকে বলা হত কিউনিফর্ম। কিউনিফর্ম লিপিতে কাদার শ্লেটে লেখা হয় গিলগামেশের মহাকাব্য।

        গিলগামেশের মহাকাব্য কে লিখেছেন তা জানা যায় না। কাহিনী কিংবদন্তির বীরপুরুষ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে গিলগামেশকে। মেসোপটেমীয় সভ্যতা যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উঁচু স্তরে উঠেছিল, গিলগামেশের মহাকব্য তার অন্যতম উদাহরণ

adx ar

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

adx ar
Comments

You must be logged in to post a comment.

adx ar
POPULAR ARTICLES
About Author